[Featured Post][featured][recent][5]

জনপ্রিয় পোস্ট

মারিয়ানা’স ওয়েব কি? ইন্টারনেট এর এই সবচেয়ে রহস্যময় ও অন্ধকার স্থান সম্পর্কে জানুন

অনেকেই হয়ত মারিয়ানা'স ওয়েব এর নাম শুনেছেন; আবার অনেকে হয়ত শুনেন নি। মারিয়ানা'স ওয়েব আসলে কি? আমরা কি মারিয়ানা'স ওয়েব সার্ফ ক...

পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মূল টার্গেট ছিল হাসিনা ও জে. মঈনকে হত্যা ॥ নেপথ্যে আইএসআই
সাকা ৪০ কোটি টাকা দেয় বিডিআরের এক সাবেক ডিজিকে ॥ সিএনএন ওয়েবসাইটে আই-রিপোর্ট
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতা বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনায় ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী টেলিভিশন সিএনএনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, আইএসআইয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ভারত সরকারের সচিবালয় সাউথ ব্লকের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, এই বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনায় ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন-উ আহমেদকে হত্যা। আইএসআই শেখ হাসিনার মধ্যপন্থী মতাদর্শিক অবস্থানের কারণে শঙ্কিত হয়েই এই পরিকল্পনার আদেশ দেয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরী ৪০ কোটি টাকা দেন। এই ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিডিআরের এক সাবেক মহাপরিচালককে ব্যবহার করেন। বিডিআরের সদস্যদের মধ্যে নানা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে হত্যাকা- চালানো হয়। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীতেও পাকিস্তানপন্থী কর্মকর্তারা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন।
দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞ মামলার রায় প্রদান করা হচ্ছে আগামী ৫ নবেম্বর। গত ৩০ অক্টোবর এ হত্যাযজ্ঞ মামলার রায় প্রদান হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদারও করা হয়। যেসব কারাগারে বিডিআর জওয়ানরা রয়েছে সেসব কারাগারে গড়ে তোলা হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তাবলয়। লালবাগের অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছিল নজিরবিহীন নিñিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তবে ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত সিএনএন তার প্রতিবেদনে তুলে এনেছে ভয়াবহ সব তথ্য। হত্যায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই জড়িত বলে সিএনএন দাবি করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনায় ছিল শেখ হাসিনা এবং সে সময়ের সেনাপ্রধান মইন-উ আহমেদকে হত্যা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহ হলেও তা করার পরিকল্পনা ছিল আগের দিন। সেদিন শেখ হাসিনা এবং মইন-উ আহমেদ বিডিআর দরবার হলে গেলেও ষড়যন্ত্রকারীরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিতে পারেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রক্তক্ষয়ী এই ষড়যন্ত্রের খেসারত ঢাকাকে বেশ ভালভাবেই দিতে হয়েছে। অন্যদিকে তৎকালীন মাত্র দুই মাস মেয়াদ অতিক্রান্ত শেখ হাসিনার সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য যা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। পিলখানা হত্যাকা-ে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) উচ্চপদস্থ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭০ জন নিহত হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের একদল সদস্য তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকা-টি এতই বর্বর ছিল যে, শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। এর বাইরে গণকবরও দেয়া হয়েছিল অনেক লাশ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত। এতে বলা হয়, ভারত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এই ঘটনায় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এবং আইএসআইয়ের চর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত থাকার প্রমাণ আছে। এই বিএনপি নেতাকে প্রতিবেদনে এই অঞ্চলের অপরাধ জগতের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে সালাউদ্দিন চৌধুরী একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে একজন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ভারতে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র চোরাচালান হচ্ছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, বিডিআরের সদস্যদের মধ্যে নানা বিষয়ে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে পিলখানা হত্যা ঘটানো হয়। এই পরিকল্পনা এতটাই সুচারু ছিল যে, কোন গোয়েন্দা সংস্থা তা ধরতে পারেননি। এ ঘটনায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক ফজলুর রহমানকেও ব্যবহার করেন। ওই ডিজিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ৪০ কোটি টাকা দেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আর সে সময় বিডিআরের চার উপসহকারী পরিচালককে পাঁচ কোটি করে টাকা দেন। আর চার শ’ সিপাইকে দেয়া হয় পাঁচ লাখ করে টাকা। কেউ কেউ ৫০ লাখ করে টাকা পেয়েছেন বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ঘটনা চলাকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগ বাড়তে থাকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও নেয়। ভারতের সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) প্রণব মুখার্জি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। পাকিস্তানী চরের ফোনে আড়ি পেতে তথ্য উদ্ধার করা হয় জানিয়ে সিএনএন বলেছে, ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ রসুলের সঙ্গে টেলিফোন কলে আড়ি পেতে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই কর্মকর্তার সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ওই পাকিস্তানী কর্মকর্তা ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং পাকিস্তানকে সব জানিয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টায় সাজ্জাদ রসুল আইএসআইয়ের সদর দফতরে ফোন করে সে সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যখন বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাকর্মকর্তারা কিছুই জানতে পারেননি, তখন পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা কীভাবে ভেতরের সব ঘটনাপ্রবাহ জানলেন, তা একটি বড় প্রশ্ন।’ ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর কজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও ফোনে দুবাই, লন্ডন এবং ইসলামাবাদে আইএসআইয়ের চরদের সঙ্গে ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলের তুলনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মধ্যপন্থী। ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান কঠোর। এই সরকার টিকে থাকলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিচারের ভয়ও পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের মধ্যে ছিল। গোটা বিদ্রোহে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও নানা সহযোগিতা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত নীতি এবং অন্যান্য অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন ছিল। এ জন্যই পথের কাঁটা দূর করার চেষ্টা করেছে আইএসআই। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে দরবার হলে বার্ষিক দরবার শুরু হয়। আচমকা উপস্থিত জওয়ানরা জাগো বলে হুঙ্কার দিয়েই দরবার হল ত্যাগ করে। তারা অস্ত্রাগার লুট করে। সিপাহি মাঈন রাইফেল নিয়ে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে তাক করে। উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা মাঈনকে নিরস্ত্র করে ফেলে। এর পরই শ’ শ’ বিদ্রোহী অস্ত্রসহ দরবার হলে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। গুলিতে পুরো দরবার হল ঝাঁজরা হয়ে যায়। হত্যা করা হয় বহু সেনাকর্মকর্তাকে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারিও একইভাবে চলে হত্যাকা-। টানা ২ দিনে ৫৮ সেনাসদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। ৫৮ সেনাসদস্যের মধ্যে ৫৭ জনই কর্মকর্তা। হত্যার পর সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহ ম্যানহোল দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। অনেকের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। গণকবর দেয়া হয় অনেক সেনা কর্মকর্তার মৃতদেহ। হত্যার পর দ্রুত লাশ গুম করতে মৃতদেহগুলো খুবই আপত্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে, ম্যানহোলে ও নর্দমায়।

Post a Comment