উন্নয়নের ধারা সচল রাখতে নৌকায় ভোট দিন ॥ জয়
বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল, ওরা ক্ষমতায় এলে ফের হাওয়া ভবন, জঙ্গীবাদ ॥ গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে সাত পথসভা
জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। জাতি এখন আর কোন অনির্বাচিত সরকার দেখতে চায় না। কোন অনির্বাচিতরা আর তত্ত্বাবধায়কের নামে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। বিএনপি-জামায়াতকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দিলে দেশে আবারও সন্ত্রাস ফিরে আসবে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, লোডশেডিং, গ্রামে গ্রামে মঙ্গার পাশাপাশি দেশে ফের হাওয়া ভবন ফিরে আসবে। দেশের জনগণ কোন সন্ত্রাসী দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই দেশকে পুরোপুরি সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার থেকে গোপালগঞ্জে আসার পথে পৃথক পৃথক সাতটি পথসভায় তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয় আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত থাকে, সার্বিক উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। তিনি বলেন, তারা বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে যেভাবে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছিল এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। এখন হুজি, জামায়াত, শিবিরকে জঙ্গীদের মাঠে নামিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত আর রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসলে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেব, প্রতিটি গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হবে, যেখানে বিনামূল্যে আপনারা চিকিৎসাসেবা পাবেন। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে এবং স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষকার্যক্রম অবৈতনিক করা হবে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় আসলে দেশ জঙ্গীবাদ, বোমাবাজি ও সন্ত্রাস ফিরে আসবে। আজ শনিবার বাগেরহাট, খুলনার বিভিন্ন স্থানে পথসভায় বক্তব্য রাখবেন। পরে যশোর বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
সকাল সাড়ে নয়টা সফর সঙ্গীদের নিয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে গণভবন ত্যাগ করেন। সন্ধ্যায় তিনি সফর সঙ্গী ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে ফাতেহা পাঠ করেন। ঢাকা থেকে বের হওয়া কেরানীগঞ্জে পৌঁছলে স্থানীয় সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে এবং সেøাগান দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অভ্যর্থনা জানান। এ ছাড়া ঢাকা-মাওয়া মহাড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা স্বতঃফূর্তভাবে অংশ নিয়ে ফুল ছিটিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুভেচ্ছা জানান। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ সেজেছিল বর্ণিল সাজে। ভাগিনাকে বরণ করতে বিভিন্ন সেøাগান, পোস্টার, ব্যানার, তোরণ নির্মাণ করা হয়। সজীব জয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, জয় তুমি এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সঙ্গেসহ বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের আগমনে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ জেলার সংসদ সদস্য এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ব্যাপক শোডাউন দেন। শ্রীনগরে আয়োজিত পথসভা রীতিমতো জনসভায় রূপ নেয়। সভামঞ্চের সামনে লোক ধারণের ঠাঁই না থাকায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় দু’পাশে দাঁড়িয়ে দুই হাত নেড়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বক্তব্যের শুরুতেই সজীব ওয়াজেদ জয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিরিজ জয়ে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্রিকেট টিমকে অভিনন্দন জানান।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল জানান, জেলার সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলী, শ্রীনগর উপজেলার ছনবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার মাওয়া চৌরাস্তায় তিনটি পৃথক জনসভায় বক্তব্যে রাখতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, দেশে সর্বদলীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব দেয়া হলেও বিএনপি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৩ দিনের হরতাল দিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করেছে। আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি নেত্রীকে ফোন করে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে অনুরোধ উপেক্ষা করে বিএনপি নেত্রী ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন, হরতাল দিয়ে বোমা হামলা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, কোন অনির্বাচিত সরকারকে আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। আলোচনার পথ ছেড়ে তারা হরতাল দিয়ে আইনমন্ত্রীর বাসভবন, আইসিটি প্রসিকিউটরের বাসভবন, বিচারপতির বাসভবনসহ বিভিন্নস্থানে বোমা মেরে শিশুসহ অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ বিএনপি বলেছে ২১ জন কম হয়ে গেছে। আগামীতে হরতাল হলে ৪০ জন মারা যাবে। এটা গণতন্ত্রের লক্ষণ হতে পারে না। তাই দেশের জনগণ কোন সন্ত্রাসী দলকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে তিনি আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
দুই নেত্রীর ফোনালাপ সম্পর্কে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশবাসীতে টিভিতে দেখেছেন ও শুনেছেন কীভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী আমার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তিনি আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য গ্রেফতারকৃত মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছে। খালেদা জিয়ার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর আজ কারাগারে। তারপরও উনি (খালেদা জিয়া) আমার মাকে দায়ী করেছেন। এরকম মিথ্যাচার কোন নেত্রীর কাছ থেকে আশা করা যায় না।
পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ ও ওসমান গনি তালুকদার, গোলাম সারোয়ার কবির, আবদুল রশিদ সিকদার, ছাত্রলীগ নেতা এম আবদুর রহমান জীবন প্রমুখ। এ সময় জয়ের সফরসঙ্গী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র রেজোয়ান সিদ্দিকি ববি, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুর থেকে অভিজিৎ রায় জানান, গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথসভায় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, জাতি এখন আর কোন অনির্বাচিত সরকার দেখতে চায় না। আগামী নির্বাচন সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিতদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনে বিরোধী দলের নেতার কাছে আমার মা শর্তহীন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁকে দাওয়াত করেছিলেন আলোচনা করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে নিজের কথা নিজেই ভঙ্গ করেছেন আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী। কেন তিনি নিজের দেয়া কথা রাখেননি তা দেশের মানুষের কাছে অজানা নয়।
জয় বলেন, দেশের সব অঞ্চলকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে এসে বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করেছে। তিনি আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় আরও বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ প্রমুখ।
মাদারীপুর থেকে সুবল বিশ্বাস জানান, জেলার শিবচরের পাঁচ্চরে আয়োজিত পথসভায় জয় বলেন, দেশে আর কোনদিন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অনির্বাচিত সরকার আমার মাকে ১১ মাস জেল খাটিয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিন আমরা প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেব। প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন এমপিসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। গোপালগঞ্জ পৌঁছলে বেসরকারী বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপিসহ অন্য নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান।
জয়ের সফরসঙ্গী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র রেদওয়ান সিদ্দিক ববি, শেখ হেলাল এমপি, একেএম এনামুল হক শামীম, আব্দুস সোহবান গোলাপ, এসএম কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাউছার, পঙ্কজ দেবনাথ, দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহসম্পাদক লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, গোলাম সরোয়ার কবির, ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, শেখ রাসেল প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার অমল সাহা খুলনা থেকে এবং আমাদের সংবাদদাতা বাগেরহাট থেকে জানান, আজ শনিবার বাগেরহাট ও খুলনায় বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। জয়কে স্বাগত জানাতে এই দুই জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সর্বত্র সৃষ্টি হয়েছে সাজ সাজ রব। টুঙ্গিপাড়া থেকে রওয়ানা হয়ে সকাল ১০টায় খানজাহান আলী (র) মাজার জিয়ারতের জন্য তিনি বাগেরহাট যাবেন। মাজার জিয়ারত শেষে তিনি খুলনার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন।
Post a Comment