[Featured Post][featured][recent][5]

জনপ্রিয় পোস্ট

মারিয়ানা’স ওয়েব কি? ইন্টারনেট এর এই সবচেয়ে রহস্যময় ও অন্ধকার স্থান সম্পর্কে জানুন

অনেকেই হয়ত মারিয়ানা'স ওয়েব এর নাম শুনেছেন; আবার অনেকে হয়ত শুনেন নি। মারিয়ানা'স ওয়েব আসলে কি? আমরা কি মারিয়ানা'স ওয়েব সার্ফ ক...

প্রশিক্ষিত শিবির কর্মীর পেট্রোল বোমায় মৃত্যুর মুখে ওরা পাঁচজন
‘আমার গায়ে আগুন দিয়ে ওরা আনন্দে হাসছিল’- শরীরের নব্বই ভাগ পুড়ে যাওয়া কিশোর মনির
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের ১৮ দলীয় হরতালের সহিংসতায় ওরা পাঁচজন মারাত্মক দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের পেট্রোল বোমায় ওরা মারাত্মক দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে। কষ্ট, যন্ত্রণায় ও বেদনায় ওরা হাসপাতালে বেডে ছটফট করছে। হরতালের আগেরদিন রাতে সহিংসতায় সাভারের নবীনগরে পিকেটারদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুনে সিএনজির ভেতরে দগ্ধ হওয়া যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল (৩০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় মারাত্মক দগ্ধ সিএনজি যাত্রী মটরপার্স ব্যবসায়ী হসু মিয়া (৩৫) ও চালক আসাদুল গাজী (৩৩) ও গাজীপুরে গাড়িতে দেয়া আগুনে দগ্ধ কিশোর মনির হোসেন, একই এলাকায় অগ্নিদগ্ধ সুমী ও তার পাশের শয্যায় দাদি রহিমা মারাত্মক দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ওদের দেখার কেউ নেই। কী অপরাধ করেছে ওরা। এমন প্রশ্ন তাদের আতœীয়-স্বজন। তাদের এক কথা ওই পাষা-ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দেশে এ রকম নরপশুদের থাকার অধিকার নেই। যারা মানুষের জীবন কেড়ে নিতে আনন্দ পায়।
জানা গেছে, রবিবার রাত ১০টার দিকে সাভারের নবীনগরের ক্যান্টনমেন্টের সামনে দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে যাচ্ছিলেন যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ও মোটরপার্স ব্যবসায়ী হাসু মিয়া। এ সময় কয়েকজন পিকেটার ওই সিএনজিকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ওই সিএনজিতে আগুন ধরে যায়। এতে সিএনজির ভেতর আটকা পড়ে মারাত্মক দগ্ধ হন মুকুল। আর সিএনজিচালক আসাদুল (৩৩) ও অপর যাত্রী মোটরপার্স ব্যবসায়ী হাসু মিয়া (৩৫) দগ্ধ হয়। পরে তাদের মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তাদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ব্যাপারে বার্ন এ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জনকণ্ঠকে জানান, আসাদুলের ৩৫ শতাংশ এবং হাসু মিয়ার ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে আসাদুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরে পুলিশ মুকুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহত মুকুলের পিতার নাম হাফিজ উদ্দিন। তিনি বিশ্বাস গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন। বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতদিয়ায়। তার বাসা সাভারের নবীনগরে।
হরতালে সহিংসতায় দগ্ধ ৫ জন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে : সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে। বার্ন ইউনিটের বেডে ১৫ বছর বয়সের কিশোর মনির হোসেনের সারাশরীর আগুনে পুড়ে গেছে। চেনার উপায় নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হরতালে গাজীপুরে গাড়িতে দেয়া আগুনে দগ্ধ কিশোর মনির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেহের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ধরনের রোগী বাঁচানো কঠিন। বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মনিরের শয্যার পাশে তার বাবা ভ্যানচালক রমজান আলীর (৫০)। তিনি প্রহর কাটছে ছেলের পাশে উৎকণ্ঠায়। এ ভ্যানগাড়িতে করে ছেলে নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস বাবার চোখের সামনে শিবিরের ক্যাডারদের পেট্রোল বোমার আগুনে ছেলে মনিকে পুড়তে হলো। বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করে মনির বার বার বলছিল, বাবা ওরা কেন আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল। ওদের কোন মায়া-মমতা নেই। আমাকে পুড়তে দেখে ওরা আনন্দে হাসছিল। ওদের কী ভাই নেই। ওদের ভাইকে মরতে দিত এভাবে। রমজান আলীর বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার বড়কাঞ্চনপুর গ্রামে। সেখানে মা আর ছোটভাইসহ মনির থাকত। পেশাগত কারণে গাজীপুর শহরে থাকা রমজানের কাছে দুদিন আগে বেড়াতে এসেছিল ছেলে মনির। রমজান আলী জানান, হরতালে গাড়ি বের করবেন কিনা, তা দেখার জন্য সকাল ১০টার দিকে তিনি ছেলেকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে চান্দনা চৌরাস্তায় এসেছিলেন। চৌরাস্তার পূর্বপাশে ছেলে মনিরকে গাড়িতে রেখে একটু বের হন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দূর থেকে হঠাৎ দেখলাম, ৪-৫ জন যুবক আমার গাড়ির কাছে এসে কিছু পাউডার ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিল। এর সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। গাড়ি ভেতর ছেলেকে আগুনে পুড়তে দেখে পাগলে মতো ছুটে এলাম। দাউ দাউ আগুনের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ ছেলেকে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন তিনি। তবে ততক্ষণে ছেলে গায়েও আগুন ধরে গেছে। পরে ছেলে মনিরকে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পোড়া ছেলে ধরে রমজান হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করে বলেন, ওই পাষা-দের কী ভাই-বোন নেই। যারা আমার ছেলেকে পুড়িয়েছে। আল্লাহ তাদের যেন বিচার করে। ওরা কোনভাবে এ দেশের নাগরিক হতে পারে না। ওরা পাষা-। ওদের মায়া-মমতা নেই। আমি ওই পাষা-দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হরতালের আগে রবিবার রাতে গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ সুমী ও পাশের শয্যায় তার দাদি রহিমা বার্ন ইউনিটে বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। হরতালের আগের দিন রবিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সর্মথনকারী। এতে বাসের যাত্রী নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শেখ জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০), তার নাতনী সুমী (১০)। কষ্ট ও যন্ত্রণায় অগ্নিদগ্ধ রহিমা জানান, দুর্গাপুর থেকে ঢাকার উত্তরায় যাওয়ার পথে গাজীপুর চৌরাস্তা বাইপাস মোড়ে হরতাল সর্মথনকারী ৫-৬ যুবক এসে পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। জানা গেছে, নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শেখ জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০), তার নাতনী সুমী (১০)। এর পাশে ওয়ার্ডে সাভারে নবীনগরে শিবিরের পেট্রোল বোমায় মারাত্মক দগ্ধ শরীর নিয়ে সিএনজিচালক আসাদুল (৩৩) ও মোটরপার্স ব্যবসায়ী হাসু মিয়া (৩৫) হাসপাতালে বেডে কষ্ট ও যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কষ্ট ও যন্ত্রণায় সিএনজিচালক আসাদুল জানান, কিছু বুঝে উঠার আগে কয়েকজন পিকেটার তাদের অটোরিক্সাটি লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা মারে। একটি পেট্রোল বোমা এসে গাড়িতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনের ভেতরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। পরে লোকজন এসে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে আসাদুল ও হাসু বর্তমানে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। বার্ন এ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, আসাদুলের ৩৫ শতাংশ ও হাসু মিয়ার ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে আসাদুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পঙ্গু হাসপাতালে বোমা আহত কিশোর মুরাদ : গত ১ নবেম্বর রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে লাল টেপে মোড়ানো ককটেলের বিস্ফোরণে ঝলসে যায় ১০ বছরের কিশোর মুরাদের হাত। সড়ক ডিভাইডারের ওপর পড়ে থাকা লাল টেপে মোড়ানো ককটেলকে বল মনে করে হাতে তুলে নিতেই বিস্ফোরিত হয়। দুই হাতই ঝলসে যায় মুরাদের। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে বেডে মুরাদ কষ্ট ও যন্ত্রণায় বলে, আমার হাত ভাল হইয়া যাইব তো? ডাক্তার কী আমার হাত কাইটা ফালাইব? হাত না হইলে খামু ক্যামনে? মুরাদের মতো তার মা রোজিনা আক্তারের একই প্রশ্ন। ছেলের হাত ভাল হইয়া যাইব তো। রোজিনা আক্তার জানান, কোনভাবেই ঘুমাচ্ছে না মুরাদ। একটু পর পর নিজের ঝলসে যাওয়া হাত দেখছে আর নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। শিশু মুরাদ জানায়, রোডে বল পইরা ছিল। এক্কেরে ক্রিকেট খেলার বলের মতো। লাল টেপে মোড়া টেনিস বল। বল তুইলা বন্ধুদের ডাকতাছি। আর টেপের খোলা মাথায় হাত লাগতেই বিকট আওয়াজে বুম করে ফুটে ওঠে। ধোঁয়ায় সব আন্ধার। পরে দেখি আমার হাতেই রক্ত। মুরাদ আরও জানায়, চাচার সঙ্গে লেগুনায় কাজ করার সময় একবার বোমার এমন ‘বুম’ আওয়াজ পাইছিলাম। কিন্তু বোমা দেখতে এই রহম বলের মতো হয়, তা জানি না। জানা গেছে, গ্রীনরোডের আমবাগান বস্তির বসবাস করে। সে বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। বাবা অটোরিক্সাচালক জামাল হোসেন জানান, টাকার লাগি মুরাদকে স্কুলে দিবার পারি নাই। বেতন ঠিকমতো দিতে পারতাম না। গত ছয় মাস ধইরা মুরাদ হের চাচার লগে লেগুনায় এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগে তানিয়া আক্তার নামে ৯ বছর বয়সী শিশু আহত হয়। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুরে ২৪ মার্চ খেলনা মনে করে রিয়া ও কুলসুম ককটেলের আঘাতে নিহত হয়।

Post a Comment