ঈদুল আযহার অগ্রীম শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের পোষ্টটি শুরু করছি। অনেক দেশেই আগামী কয়েক ঘন্টা পর থেকে ঈদুল আযহা উদযাপন শুরু হবে। মক্কায় হাজীরা হজ্জ্বের যাবতীয় হুকুম পালন করে মিনায় পশু কুরবানী করবেন/করাবেন। ইতোমধ্যে ‘লাব্বায়েক-আল্লাহুম্মা-লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মক্কার আকাশ-বাতাস মুখোরিত হয়ে উঠেছে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকে আজকের মধ্যে কুরবানীর পশুটি কিনে ফেলেছেন। অনেকে হয়ত আগামীকাল কিনবেন। ঈদের শপিং সেরে অনেকে আবার দেশের বাড়িতে চলে গেছেন। অনেকে রয়ে গেছেন রাজধানী ঢাকাতেই।
তো, শেষ মুহূর্তে ঈদুল আযহার শেষ প্রস্তুতি হিসেবে আমরা এই পোষ্টে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করব। যেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখলে আশা করা যায় আল্লাহর দরবারে আমাদের কুরবানী কবুল হবে, ইনশা’আল্লাহ।
১. তাকবীরে তাশরীক: ‘আইয়্যামে তাশরীক’ তথা ৯ই জিলহজ্জ্ব ফযর নামায থেকে ১৩ই জিলহজ্জ্ব আসর নামায পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার ‘তাকবীরে তাশরীক’ পড়া ওয়াজীব। পুরুষ জোড়ে পড়বে, আর মহিলা আস্তে পড়বে। তাকবীরে তাশরীক হলো:
الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله و الله اكبر الله اكبر و لله الحمد
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।
২. নিয়্যত: কুরবানীর ক্ষেত্রে সবার আগে আমাদের নিয়্যত (উদ্দেশ্য/ইচ্ছা) শুদ্ধ করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কুরবানী শুধু আল্লাহর আদেশ পালনার্থে, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করণার্থে করা হচ্ছে। গোশত খাওয়া, লোক দেখানো, প্রতিযোগিতা -এসব কোনো উদ্দেশ্য কুরবানীতে নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ
“আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর গোশত-রক্ত-কিছুই পৌঁছে না। শুধু পোঁছে তোমাদের অন্তরের ভয়, তাকওয়া। (২২:৩৭)
“আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর গোশত-রক্ত-কিছুই পৌঁছে না। শুধু পোঁছে তোমাদের অন্তরের ভয়, তাকওয়া। (২২:৩৭)
কুরবানী দেয়ার আগে শরীকদের সবাইকে নিয়ে নিয়্যত পরিশুদ্ধকরণের ব্যপারে বুঝাতে হবে। শরীকদের কারো একজনের নিয়্যত শুদ্ধ না থাকলে শরীকদের অন্য সকলের কুরবানী নষ্ট হয়ে যাবে। তাই, এ ব্যপারে খুব সতর্ক থাকা উচিৎ।
৩. কুরবানীর আগে কিছু খাওয়া: যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হবে, তার জন্য ঈদের দিন সর্বপ্রথম খাবার হিসেবে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এটা শুধু ১০ই জিলহজ্জ্বের জন্য (ঈদের ১ম দিন)। এর পরের দু’দিন কুরবানী দিলেও প্রথম খাবার হিসেবে কুরবানীর গোশত হওয়া সুন্নত নয়।
৪. যবেহকারীর হাতে নামের চিরকুট: যিনি যবেহ করবেন, তার হাতে কুরবানীদাতাদের নাম লিখিত চিরকুট দেয়ার কোনো মূল্য নেই। এই নাম যবেহকারী মনেও রাখেন না, সেগুলো পড়েনও না, পড়লেও কোনো উপকারিতা নেই। অতএব, এটা একেবারেই অর্থহীন একটি কাজ। যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হবে তার মনে মনে রাখলেই হল, লেখার প্রয়োজন নেই।
৫. পশু যবেহ/কুরবানী: পশু যার, কুরবানী তিনি নিজে করলেই সবচেয়ে ভালো হয়। হুজুরের হাত দিয়ে কুরবানী করানোতে কোনো ফযীলত নেই। তবে কেউ হুজুর/অন্য কাউকে দিয়ে কুরবানী করালে পারিশ্রমিক=হাদিয়া (একই কথা) দেয়া উচিৎ। কারণ তিনি আপনার জন্য তার সময় ব্যয় করেছেন, যা করার কোনো প্রয়োজন তার ছিল না।
৬. পশুর চামড়া: পশুর চামড়ার টাকা গরীব-দুখী-ইয়াতীম-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দেয়া উত্তম। তবে চামড়া নিজে রেখে দিলেও দিতে পারে।
৭. পশুর গোশত বন্টনের আগে রান্না: সমস্যা নেই। তবে বন্টনটা ঠিকমত করতে হবে। বন্টন ঠিক রেখে গোশত রান্না করলে কোনো সমস্যা হবে না।
৮. গোশত বন্টন: গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে বন্টন না করে ওজন করে বন্টন করলেই বেশি ভালো হয়।
৯. কশাইদের মজুরী: কশাইদের মজুরী হিসেবে গোশত দেয়া যাবে না। অনেকসময় গোশত কাটাকাটির সময় আশেপাশের লোকজন হেল্প করে কিন্ত তারা টাকার বিনিময়ে কাজ করে না। যাওয়ার সময় গোশত নিয়ে যায়। এটা বৈধ নয়। মনে রাখবেন, গোশত=পারিশ্রমিক হতে পারবে না। গোশত=হাদিয়া/উপহার হতে পারে। তবে পারিশ্রমিক দেয়ার পর ভিন্নভাবে গোশত দেয়া যেতে পারে।
১০. তিনভাগে গোশত বন্টন: কুরবানীর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। তবে এটা কোনো আবশ্যক বিধান নয়। তিনভাগের এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ গরীব-দুখীদের জন্য, আর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে দিবে। কোথাও আত্মীয় না থাকলে, গরীব-দুখী থাকলে, আত্মীয়ের অংশটা তাদের দেয়া যেতে পারে। অথবা, সম্পূর্ণ অংশ নিজে খেয়ে ফেললেও কোনো সমস্যা নেই। তবে কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য যেহেতু ধনী-গরীব সকলের চোখে-মুখে হাসি ফোটানো, তাই গরীবদের বেশি দেয়াতে দোষের কিছু তো নেই-ই, বরং তাতে সওয়াবই আরো বেশি পাওয়া যাবে।
১১. মাসটি ইবাদতের, তা মনে রাখা: এ মাস জিলহজ্জ্ব মাস। এ মাসের ফযীলত, গুরুত্ব নিয়ে হাদীস শরীফে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। অতএব ঈদ উপলক্ষে পাপের সরঞ্জাম প্রস্তুত করে এ মাসের পবিত্রতা ক্ষুন্ন করা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। যেভাবেই হোক, এ মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা উচিৎ।
Post a Comment