কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায়
সমুদ্র হক ॥ শিশু-কিশোর মনের স্কুল শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। উৎকণ্ঠায় তাদের অভিভাবক। পরীক্ষা সময় মতো হবে কিনা, না হলে কি হবে এর কোন উত্তর নেই শিক্ষকগণের কাছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। শিক্ষা বোর্ড থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের শেষ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন গুজরান করছে। কী হতে যাচ্ছে আগামীতে, ঘরে বাইরে মাঠে ঘাটে সকলেরই একটা প্রশ্ন! কোন উত্তর মেলে না। যে যার মতো করে বলার চেষ্টা করেন কিছু একটা। এর শাখা প্রশাখার বিস্তার ঘটে শহর থেকে মাঠ পর্যায়ে। কথার পিঠে কথার সঙ্গে নানা মন্তব্য যোগ হয়ে নতুন নতুন কথার সৃষ্টি হয়। গেল কদিন ধরে দুই নেত্রীর দূরআলাপন নিয়ে সাধারণের মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এই রেশ কবে কখন শেষ হবে তাও কেউ জানে না। সংলাপ হবে কিনা, আর হলে কি হবে এ নিয়েও জল্পনা। একজন তো বললেন গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করে কোন ‘এ্যাসট্রোলজার’ কিছু বলতে পারবেন না। আরেকজন বললেন ‘ডেমোক্র্যাসি ইজ দ্য ফেস্টিভ্যাল অব এক্সপ্রেসন অব ওপিনিয়ন’ তা না হয়ে বর্তমানে ‘ডেমোক্র্যাসি ইজ দ্য ফেস্টিভ্যাল অব ভায়োলেন্স এ্যান্ড টেরোরিজমে’ পরিণত হয়েছে (গণতন্ত্র হলো মত প্রকাশের উৎসব, তা না হয়ে গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে ভায়োলেন্স ও সন্ত্রাসের উৎসবে)। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিসীমা কতটুকু তাও জানা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো ‘অবিশ্বাস’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কেউ বুঝতে চাইছেন না, যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা রাজনীতিবিদেরই সমাধান করতে হবে। রাজনীতিকদের কাছেই সমাধান আছে। কোন বড় দেশের ‘বার্তা বাহক’গণ এই সমাধান করে দেবে না।গণতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক সমস্ত সমালোচনা গণতন্ত্রকে মজবুত করে। বিশ্বের দেশে দেশে তাই দেখা যায়, দ্বন্দ্বের রাজনীতি অনেক উন্নত দেশেই আছে। তারপরও কোন ‘ক্রুশিয়াল’ পিরিয়ডে নেতা নেত্রীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকে বৃত্ত বা বক্সের বাইরে। যেমন- কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে এমন বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব শুরু হলো যা মার্কিন ইতিহাসে দেখা যায়নি। বাজেট উপস্থাপনই আটকে যাওয়ার উপক্রম। এই অবস্থা সুন্দরভাবে সামলে উঠলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নিজে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে এমন একটা সমঝোতায় পৌঁছলেন যা মার্কিন ইতিহাসে দৃষ্টান্তের মহা দলিল হয়ে থাকল। এখন সে দেশে যিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন এ দৃষ্টান্ত তাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তার (খালেদা জিয়া) কথা শুনেছেন। বড় হতে গেলে যেমনটা উদার হতে হয় তাও তিনি দেখিয়েছেন। অপর পক্ষ থেকে তা পাওয়া যায়নি। বিএনপির নেতারা বলছেন দূরআলাপন প্রকাশ করা ঠিক হয়নি। কেন ঠিক হয়নি তা বলছেন না। বিরোধীদলীয় নেতা কি জানতেন না টেলিফোনে যখন কথা হচ্ছে তা রেকর্ড হবে (তিনিও প্রধানমন্ত্রী থাকলে তাই করতেন। সাধারণ মানুষই প্রয়োজনীয় কোন কথা বলার সময় তথ্য রাখার প্রয়োজনে মোবাইল ফোনের অপশনে গিয়ে রেকর্ড করেন আর দেশের বড় দুই দলের নেত্রী কথা বলবেন তা রেকর্ড থাকবে না তা কি হয়)। কথা বলার সময় দুই নেত্রীরাই সংযত আচরণ করা উচিত ছিল। একজন তা করেছেন। আরেকজন তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হবে বলেই কি দূরআলাপন প্রকাশ করা ঠিক হয়নি বলা হচ্ছে! রাজনীতিকরা কি বুঝতে পারছেন সুষ্ঠু সমাধানের আশায় দেশের সকল মানুষ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে! সামনেই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের পাবলিক পরীক্ষা। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের বিপক্ষে যায় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচী (হরতাল অবরোধ অসহযোগ) দেয়া কতটা সমীচীন তা কি বিজ্ঞ রাজনীতিকগণ ভেবে দেখেন! তারা তো কথায় কথায় বলেন ‘এ দেশের মানুষ...।’ তাহলে এ দেশের মানুষের ‘পালস’ বোঝার চেষ্টা কতটা করেন! যারা টানা হরতাল অবরোধের কর্মসূচী দেন তারা কি কখনও বোঝার চেষ্টা করেন এ দেশের কত শতাংশ মানুষের সন্তান সরকারী ও সাধারণ স্কুল কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে! বড় রাজনীতিবিদদের সন্তানরা তো লেখাপড়া করে বিদেশে। সেই রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশ্ন-বিশ্বের যে দেশে আপনার সন্তান লেখাপড়া করে সেই দেশে কোন দুর্যোগ বা অস্থিরতার খবর পেলে আপনার মনের অবস্থা কি হয়। আপনি কতবার ফোন করে খবর নেন। আপনার সন্তান যেমন আপনার হৃদয়ে প্রিয় এদেশের সাধারণ মানুষের সন্তানও তেমনই প্রিয়। এই সময়টায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অভিভাবকদের অস্থিরতা- কি হবে পরীক্ষার! পরীক্ষার সময় বোমাবাজি হলে কতটা নিরাপত্তায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে। কোন কারণে পরীক্ষা না হলে সেই পরীক্ষা ফের কবে হবে! শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ভাবনা, কি হবে পরীক্ষার! প্রিপারেশন নেয়ার পর সময় মতো পরীক্ষা না হলে তার একটা ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। স্কুলের এক শিক্ষক বললেন, পাঠের চলমান প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটলে সেই শিক্ষার্থীকে পুনরায় আগের জায়গায় আসতে অনেক বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় ভাল শিক্ষার্থীর ফল আশানরূপ নাও হতে পারে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে এই প্রভাব পড়ে বেশি। বিষয়গুলো কি রাজনীতিকরা বোঝেন! একজন রাজনীতিক বললেন, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয় (সাবাস! কি যুক্তি!)। আগামী প্রজন্মের লেখাপড়াকে যিনি ক্ষুদ্র স্বার্থ বলেন এর চেয়ে দুঃখজনক কথা (এবং হতাশার কথা) কী হতে পারে! যে রাজনীতিকগণ শিক্ষাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য জ্ঞান করেন তাদের কাছে দেশ কি আশা করে....!
Post a Comment