[Featured Post][featured][recent][5]

জনপ্রিয় পোস্ট

মারিয়ানা’স ওয়েব কি? ইন্টারনেট এর এই সবচেয়ে রহস্যময় ও অন্ধকার স্থান সম্পর্কে জানুন

অনেকেই হয়ত মারিয়ানা'স ওয়েব এর নাম শুনেছেন; আবার অনেকে হয়ত শুনেন নি। মারিয়ানা'স ওয়েব আসলে কি? আমরা কি মারিয়ানা'স ওয়েব সার্ফ ক...

দেশের সার্বিক উন্নয়নে দাতাদের কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পাওয়া এবং তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হওয়ার পরও প্রায় ১১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কম পাওয়া গেছে। এর কারণ, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, বাস্তবায়নে অক্ষমতা ও দাতাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। গত পাঁচ বছরে দাতাগোষ্ঠী ১৯৫৮ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিশ্র“তি দেয়। কিন্তু গত অর্থবছরের হিসাব অনুসারে সরকার পেয়েছে মাত্র ৮৮৭ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা। এজন্য পাইপলাইনে যুক্ত হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে একবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলে তা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। সরকারের সঙ্গে দাতাদের সম্পর্কে ভাটা পড়ার পর স্বাভাবিক করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় অর্থছাড়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে দাতারা। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরে দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ১ হাজার ৯৫৮ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে সরকার পেয়েছে মাত্র ৮৮৭ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা। হিসাব করলে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ডলার প্রতিশ্র“তির বিপরীতে অর্থছাড় হয় ২২২ কোটি ডলার। পরের অর্থবছরে ৫৯৬ কোটির বিপরীতে ছাড় হয় মাত্র ১৭৭ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৭৬ কোটির প্রতিশ্র“তি থাকলেও পাওয়া যায় মাত্র ২১২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রতিশ্র“তির অর্ধেকেরও কম অর্থছাড় করেছে দাতারা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের প্রতিশ্র“তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ২৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা। সহায়তার আশ্বাস এবং সেই অনুসারে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করার পরও অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এসব কারণে পাইপলাইনে রেকর্ড পরিমাণ ১৮৫৬ কোটি ডলার আটকে রয়েছে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে দাবি করেন, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা সাময়িক। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তা দূর হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সংস্থাটি বিভিন্ন খাতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই মহাজোট সরকারের সঙ্গে দাতাদের বিরোধ শুরু হয় সরকারি ক্রয় আইন সংশোধন নিয়ে। সে সময় ২ কোটি টাকার কম অর্থের সরকারি কেনাকাটায় কিছুটা ছাড় দিতে চায় সরকার। বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দাতারা অভিযোগ করেন, এর মাধ্যমে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে। বিষয়টি ঘিরে দুপক্ষের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ৩৬টি প্রকল্পে তিন মাসের জন্য অর্থছাড় বন্ধ করে দেয় শীর্ষ দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কেনাকাটায় ছাড় দেয়া হবে না এমন শর্তে বাংলাদেশ রাজি হলে পরবর্তী সময়ে অর্থছাড় শুরু করে সংস্থাটি। এরপর দাতাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে ঘিরে। প্রকল্পটিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে কেন্দ্র করেই মূলত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্যও ক্ষুব্ধ করে সংস্থাটিকে। ইআরডি সচিবও মনে করেন, মূলত পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পর্কের অবনতিসহ বিভিন্ন কারণে এতদিন অর্থছাড় কম হলেও চলতি বছরে আলাদা একটি কারণে সহায়তা কমে যেতে পারে। কেননা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতীয় নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর করতে বলছে দাতারা। এজন্য চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্র“তি ও অর্থছাড়ে তারা খুবই সতর্ক। অর্থবছরের তিন মাসের চিত্র দেখলে এটা বোঝা যায়। ইআরডি সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্র“তির পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৮৯ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ প্রতিশ্র“তির পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ হিসাবে প্রথম প্রান্তিকে অর্থছাড়ের পরিমাণ কমেছে ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দাতাদের প্রতিশ্র“তির মধ্যে অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৯ লাখ ডলার। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ।
এদিকে গত পাঁচ বছরে প্রকল্পে দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, বাস্তবায়নে অক্ষমতার অভিযোগে বড় অঙ্কের অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৯ কোটি ৭০ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫০ কোটি ডলার। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার অদক্ষতায় চলতি অর্থবছরে ১৫ কোটি ডলার বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি। বাতিল হওয়ার পথে রয়েছে আরও কয়েকটি প্রকল্পের অর্থায়ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার মহাজোট সরকারের ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয় দাতা সংস্থাগুলো। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার সংকল্পও ব্যক্ত করে তারা। এক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা নেয়ার ক্ষেত্রে তারা কখনও কখনও অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখিয়েছেন। আবার অবজ্ঞার ঘটনাও ঘটেছে। ছোটখাটো আরও কিছু বিষয় দাতাদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েনকে উসকে দিয়েছে। ফলে সম্পর্কের এ টানাপোড়েনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বৈদেশিক অর্থছাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্পর্কের যে অবনতি ঘটে, তা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

Post a Comment