চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে পিবিআই- শীঘ্রই কাজ শুরু
নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ পুলিশের নতুন বিশেষ ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শীঘ্রই মাঠে নামছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এর (ফেডারেল বু্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আদলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি হচ্ছে পুলিশের এ বিশেষ ইউনিট। সারাদেশের চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এই ইউনিট গঠন করা হবে। প্রায় এক হাজার ফোর্স নিয়ে এই ইউনিটের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হবে। এ মাসেই পিবিআইয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। এ ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, সারাদেশে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশের নতুন ইউনিট পিআইবির নীতিমালা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করা হবে।সংশিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পিবিআইয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথমদিকে জেলা পর্যায়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউনিট যাত্রা শুরু করবে। পরে পর্যায়ক্রমে মেট্রোপলিটন এলাকায় কাজ করবে পিবিআই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রতিবছর দেশে গড়ে এক লাখ ৬০ হাজার মামলা হয়। এসব মামলার মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পাশাপাশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মামলাগুলোসহ ১৫ ধরনের মামলা হয়। আর এই তদন্ত পর্যায়ক্রমে শুরু করবে পিবিআই। পুরো জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের পর প্রতিবছর ৭০ হাজার মামলা তদন্ত করবে এ বিশেষ ইউনিট। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, মূলত থানায় মামলাজট কমাতে ও সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্যই এই ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ১৮ অক্টোবর সরকারের এক আদেশে পিবিআই গঠন হয়। ডিসেম্বররের ২২ তারিখে নতুন ইউনিট পিবিআইয়ে পদায়ন শুরু হয়। পরে কিছু পুলিশ সদস্য নির্দেশিত হয়ে কাজ শুরু করেন। এখনও পিবিআইয়ের স্থায়ী কার্যালয় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই ঢাকা মহানগর পুলিশের কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের দোতলায় অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় এক হাজার ফোর্স নিয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হবে। এখন চলছে গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারাদেশে থানা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জট কমানোর উদ্দেশ্যেই এই ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোয় গঠিত এই পৃথক তদন্ত ইউনিট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়। এজন্য জনবল ৯৭০ মঞ্জুরি দেয়া হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। একজন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এই ইউনিটের নেতৃত্ব দেবেন। তার সঙ্গে দু’জন এডিশনাল ডিআইজি থাকবেন। যারা পিবিআইর পূর্ব এবং পশ্চিম জোনের নেতৃত্বে তদন্তের কাজ তদারকি করবেন। এতে ৯ পুলিশ সুপার (এসপি), ৭০ এডিশনাল এসপি, ৪ জন এএসপি, ২১০ ইন্সপেক্টর, ২৮০ এসআই, ১২১ এএসআই এবং ২৪২ জন কনস্টেবল থাকবে। সূত্রগুলো জানায়, একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তিন বছর সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শেষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে ওই প্রতিবেদন সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে প্রায় ৭৫ শতাংশ মামলা খালাস হয়ে যায়। এ কারণে অনেক আসামি খালাস পেয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ২০১১ সালে ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ নামে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলে পুলিশ এ্যাক্ট, ১৮৬১ এর সেকশন ১২ এর ক্ষমতাবলে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে গত বছরের অক্টোবরে পিবিআই গঠিত হয়। পিবিআইয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, পিবিআইয়ে বেশিরভাগ কর্মকর্তাই যোগদান করেছেন। কাজকর্মও গুছিয়ে ফেলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী খুব শীঘ্রই কাজে নামবে পিবিআই। তিনি আরও জানান, পিবিআই প্রচলিত কোন সংস্থা নয়। ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে মামলার তদন্ত কাজ করবে তারা। থানা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য এটি গঠিত হয়েছে।
Post a Comment