এ কেমন বর্বরতা!
পিতার সামনে আগুনে পুড়ছে সন্তান
পিনাকি দাসগুপ্ত
'আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কখনও কোন দলের হয়ে যাননি মিছিল মিটিংয়ে। তার কী দোষ ছিল? কোম্পানীতে খুব ছোট চাকরি করতেন। তার সীমিত আয়ের উপরই চলতো আমাদের সংসার। বিধবা হলাম, দু'কন্যা হারালো তার পিতাকে। এ কোন্ বর্বরতা যে আমার স্বামীকে প্রাণ হারাতে হলো পেট্রোল বোমার আগুনে। এ প্রশ্ন নিহত সিএনজি যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের (৩৮) স্ত্রী বীণা সুলতানার। অপরদিকে গাজীপুরে পিতার সামনে অগ্নিগদ্ধ হয়েছে কিশোর মনিরুজ্জামান (১৫)। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ছিলেন বিশ্বাস গ্রুপের নবীনগর (সাভার) প্রকল্পের ক্রয় কর্মকর্তা। রবিবার রাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে তার সহকর্মীকে নিয়ে ঢাকা থেকে নবীনগর ফিরছিলেন। এসময় সাভারের নবীনগরে ক্যান্টনমেন্টের সামনে পিকেটারদের নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমায় সিএনজিতে আগুন ধরে যায়। এসময় দগ্ধ হন মুকুল, মুকুলের সহকর্মী মোটর মেকানিক হাসু মিয়া (৩৫) ও সিএনজি চালক আসাদ (৩২)। তাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। গতকাল সোমবার সকাল পৌনে দশটায় মারা যান মুকুল। নিহত মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের বাড়ি কুষ্টিয়ার জেলার দৌলতপুরে। তার বাবার নাম হাফিজউদ্দিন। তিনি দুই মেয়ের জনক ছিলেন। বাসা সাভারের বাইপাস এলাকায়। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ সংকর পাল জানিয়েছেন, আসাদ ৩৫ শতাংশ ও হাসু মিয়ার ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে আসাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত মুকুলের ফুফাতে ভাই আবুল হাসেম বলেন, মুকুল রবিবার অফিসের কাজে (মালামাল ক্রয়ের জন্য) সহকর্মী হাসুকে নিয়ে নবীনগর থেকে পুরনো ঢাকার ধোলাইখাল এসেছিলেন। সন্ধ্যার পর ধোলাইখাল থেকে মালামাল নিয়ে একটি অটোরিকশায় করে নবীনগরের উদ্দেশ্য যাত্রা করেন। রাত আনুমানিক দশটার দিকে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে পৌঁছালে ৫/৬ জন হরতাল সমর্থক অটোরিকশায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সিএনজি অটোরিকশার সামনের কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলে মুহূর্তেই মধ্যে আগুন ধরে যায়। এতে চালক, হাসু ও মুকুল দগ্ধ হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি শেখ বদরুল আলম জানান, রাতে মুকুল (সিএনজিযোগে ঢাকা মেট্রো-থ-১৩-৫১৫১) ঢাকা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তাকে বহনকারী সিএনজিটি সাভার ক্যান্টনমেন্ট এলাকাধীন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আব্দুর রউফ গেইট অতিক্রম করার সময় পিকেটাররা সিএনজিটিতে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিদগ্ধ হয় মুকুল। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গাড়ি অগ্নিসংযোগের ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পার্কিং করা কাভার্ড ভ্যানে পিকেটারদের দেয়া আগুনে পিতার সামনে অগ্নিগদ্ধ হয় কিশোর মনিরুজ্জামান (১৫)। তাকে মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। মনিরুজ্জামান গত তিনদিন ধরে বেড়ানোর জন্য তার বাবার সঙ্গে ঐ কাভার্ড ভ্যানেই ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার মোড়ের কাছে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের পাশে পার্কিং কাভার্ড ভ্যানটিতে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এসময় কাভার্ড ভ্যানে ঘুমিয়েছিল কাভার্ড ভ্যানের চালক রমজান আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান। তবে ঘটনার সময় রমজান আলী গাড়িতে ছিলেন না। তিনি রাস্তার পাশে গাড়িটি থামিয়ে হরতাল পরিস্থিতি দেখার জন্য কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে পিকেটাররা পেট্রোল ঢেলে কাভার্ড ভ্যানটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি ছুটে এসে তার ছেলে রক্ষার চেষ্টা করলে পিকেটাররা তাকে ধাওয়া দেয়। পিকেটারদের নিক্ষিপ্ত ঢিলে তিনিও আহত হন। রজমান আলীর বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড় কাঞ্চনপুর গ্রামে।
এছাড়া রবিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ হন বাস যাত্রী দাদি রহিমা খাতুন (৫০) ও নাতনি সুমী (৯)। বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর। অগ্নিদগ্ধ রহিমা জানান, তারা দুর্গাপুর থেকে ঢাকার উত্তরায় যাওয়ার পথে গাজীপুর চৌরাস্তা বাইপাস মোড়ে হরতাল সমর্থকরা তাদের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুজনই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
পিতার সামনে আগুনে পুড়ছে সন্তান
পিনাকি দাসগুপ্ত
'আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কখনও কোন দলের হয়ে যাননি মিছিল মিটিংয়ে। তার কী দোষ ছিল? কোম্পানীতে খুব ছোট চাকরি করতেন। তার সীমিত আয়ের উপরই চলতো আমাদের সংসার। বিধবা হলাম, দু'কন্যা হারালো তার পিতাকে। এ কোন্ বর্বরতা যে আমার স্বামীকে প্রাণ হারাতে হলো পেট্রোল বোমার আগুনে। এ প্রশ্ন নিহত সিএনজি যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের (৩৮) স্ত্রী বীণা সুলতানার। অপরদিকে গাজীপুরে পিতার সামনে অগ্নিগদ্ধ হয়েছে কিশোর মনিরুজ্জামান (১৫)। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল ছিলেন বিশ্বাস গ্রুপের নবীনগর (সাভার) প্রকল্পের ক্রয় কর্মকর্তা। রবিবার রাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে তার সহকর্মীকে নিয়ে ঢাকা থেকে নবীনগর ফিরছিলেন। এসময় সাভারের নবীনগরে ক্যান্টনমেন্টের সামনে পিকেটারদের নিক্ষিপ্ত পেট্রোল বোমায় সিএনজিতে আগুন ধরে যায়। এসময় দগ্ধ হন মুকুল, মুকুলের সহকর্মী মোটর মেকানিক হাসু মিয়া (৩৫) ও সিএনজি চালক আসাদ (৩২)। তাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। গতকাল সোমবার সকাল পৌনে দশটায় মারা যান মুকুল। নিহত মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের বাড়ি কুষ্টিয়ার জেলার দৌলতপুরে। তার বাবার নাম হাফিজউদ্দিন। তিনি দুই মেয়ের জনক ছিলেন। বাসা সাভারের বাইপাস এলাকায়। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ সংকর পাল জানিয়েছেন, আসাদ ৩৫ শতাংশ ও হাসু মিয়ার ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদের মধ্যে আসাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত মুকুলের ফুফাতে ভাই আবুল হাসেম বলেন, মুকুল রবিবার অফিসের কাজে (মালামাল ক্রয়ের জন্য) সহকর্মী হাসুকে নিয়ে নবীনগর থেকে পুরনো ঢাকার ধোলাইখাল এসেছিলেন। সন্ধ্যার পর ধোলাইখাল থেকে মালামাল নিয়ে একটি অটোরিকশায় করে নবীনগরের উদ্দেশ্য যাত্রা করেন। রাত আনুমানিক দশটার দিকে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে পৌঁছালে ৫/৬ জন হরতাল সমর্থক অটোরিকশায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে সিএনজি অটোরিকশার সামনের কাঁচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলে মুহূর্তেই মধ্যে আগুন ধরে যায়। এতে চালক, হাসু ও মুকুল দগ্ধ হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি শেখ বদরুল আলম জানান, রাতে মুকুল (সিএনজিযোগে ঢাকা মেট্রো-থ-১৩-৫১৫১) ঢাকা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তাকে বহনকারী সিএনজিটি সাভার ক্যান্টনমেন্ট এলাকাধীন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আব্দুর রউফ গেইট অতিক্রম করার সময় পিকেটাররা সিএনজিটিতে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিদগ্ধ হয় মুকুল। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গাড়ি অগ্নিসংযোগের ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পার্কিং করা কাভার্ড ভ্যানে পিকেটারদের দেয়া আগুনে পিতার সামনে অগ্নিগদ্ধ হয় কিশোর মনিরুজ্জামান (১৫)। তাকে মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। মনিরুজ্জামান গত তিনদিন ধরে বেড়ানোর জন্য তার বাবার সঙ্গে ঐ কাভার্ড ভ্যানেই ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার মোড়ের কাছে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের পাশে পার্কিং কাভার্ড ভ্যানটিতে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এসময় কাভার্ড ভ্যানে ঘুমিয়েছিল কাভার্ড ভ্যানের চালক রমজান আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান। তবে ঘটনার সময় রমজান আলী গাড়িতে ছিলেন না। তিনি রাস্তার পাশে গাড়িটি থামিয়ে হরতাল পরিস্থিতি দেখার জন্য কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে পিকেটাররা পেট্রোল ঢেলে কাভার্ড ভ্যানটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি ছুটে এসে তার ছেলে রক্ষার চেষ্টা করলে পিকেটাররা তাকে ধাওয়া দেয়। পিকেটারদের নিক্ষিপ্ত ঢিলে তিনিও আহত হন। রজমান আলীর বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড় কাঞ্চনপুর গ্রামে।
এছাড়া রবিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ হন বাস যাত্রী দাদি রহিমা খাতুন (৫০) ও নাতনি সুমী (৯)। বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর। অগ্নিদগ্ধ রহিমা জানান, তারা দুর্গাপুর থেকে ঢাকার উত্তরায় যাওয়ার পথে গাজীপুর চৌরাস্তা বাইপাস মোড়ে হরতাল সমর্থকরা তাদের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুজনই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
Post a Comment