বেশ কিছু দিন আগের জাপানের পারমানবিক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশ্বের পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশ্বের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেকগুলোই এখন বেশ ঝুকির মধ্য আছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়লেই জাপানের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নাই। বিশ্বসেরা পারমানবিক দেশগুলোর ক্রম অনুসারে আলোচনা করা হলো।
১. আমেরিকা
আমেরিকা যদিও ১৯৭৯ সালের পর থেকে কোন নতুন পারমানবিক স্থাপনা তৈরী করছে না। তার পরেও তাদের রয়েছে ১০৪টি পারমানবিক কেন্দ্রসহ বিশাল বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমেরিকার সর্বমোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ ভাগ যোগান দেওয়া হয় এই পারমানবিক কেন্দ্রগুলো থেকে।
যে কোন সময় আমেরিকাতে ভূমিকম্প বা বড় ধরনের সুনামীর মতো পরিস্থিতি হলে এটা হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির একটি।
২. ফ্রান্স
১৯টি পাওয়ার প্লান্টের ৫৮টি রিয়্যাক্টর থেকে ফ্রান্সের মোট বিদ্যুতের ৮০ ভাগই উৎপাদিত হয়। রাইন নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ প্লাল্টগুলোর অনেকগুলোরই ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশ ভাল। তবে এটা একেবারে ঝুকিমুক্ত না।
৩. জাপান
বিশ্বের তৃতীয় শক্তিধর পারমানবিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে জাপানে। জাপান যেহেতু ভূমিকম্প প্রবণ দেশ তাই এর ঝুকি তো রয়েছেই। সাম্প্রতিক সময়ের পারমানবিক পরিস্থিতি সামাল দিতেই ৯ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে জাপান সরকার, আর তাই বুঝাই যাচ্ছে তারা কত বড় ঝুকিতে আছে। জাপানের পারমানবিক পরিস্থিতির উপরে বেশ কিছু প্রকাশনাও দেখে নিতে পারেন।
- জাপানের পারমানবিক পরিস্থিতি
- জাপানের ধ্বংশজজ্ঞের স্মরনীয় কিছু ছবি
- রেডিয়েশনের কারনে অসুস্থতার উপসর্গ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
৪. রাশিয়া
১০ টি অবস্থানে ৩২ টি রিয়্যাক্টর থেকে রাশিয়ার ১৬ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ২০৩০ সালের মধ্য এটি ২৫ ভাগে উন্নিত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এখন একটি প্লান্টের কাজ চলছে এবং ২০১৩ সালের মধ্য তার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও ভাসমান নিউক্লিয়ার প্লান্টের পরিকল্পনাও তাদের আছে। রাশিয়ার বরফাঞ্চলের দিকেই এই প্লান্টগুলো স্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫. দক্ষিন কোরিয়া
২১ টি রিয়্যাক্টরের দক্ষিন কোরিয়ার প্লান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্য আরো্ ১২ টি প্লান্টের পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিন কোরিয়াতে বেশ কয়েকরার অবশ্য ছোট ছোট পারমানবিক দূর্ঘটনা দেখা যায়
৬. জার্মান
জার্মানের ১৭ টি নিউক্লিয়ার প্লান্ট দেশের এক চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদিত হয়। তাদের পানির নিচের প্লান্টটি জাপানের নিউক্লিয়ার বিষ্ফোরনের সময় বেশকিছুদিন নিরাপত্তা জনিত কারনে বন্ধ রাখা হয় এবং বিভিন্ন ঝুকি সমুহ পরীক্ষা করে দেখা হয়।
৭. কানাডা
১৯৪৭ সালে কানাডা পরীক্ষামূলকভাবে নিউক্লিয়ার প্লান্ট স্থাপন করেন। বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৫ ভাগই তাদের ১৮টি পারমানবিক কেন্দ্র থেকে আসে।
উত্তরাঞ্চলের বর্তমান প্লান্ট এলাকায় ১৯২৯ সালে ৭.২ স্কেলে ভূমিকম্প হয়। ভবিষ্যতে কোন ভূমিকম্প হলে এই এলাকার প্লান্টগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৮. আরকাইন
১৯৭০ সালের প্রারাম্ভে আরকাইনের পারমানবিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১৯৮৬ সালের চেরোনোবিল দূঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়। দশ দিনের বিষ্ফোরনে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুরে পারমানবিক বর্জ ছড়িয়ে পরে।
তাদের ১৫টি নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে দেশের অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে।
৯. চীন
সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ চীনে ১৩টি নিউক্লিয়ার প্লান্ট চালু থাকলেও তা মাত্র তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ১ ভাগ চাহিদা পূরণ করে। এর মধ্য চারটি প্লান্টে “প্যাসিভ প্রটেকশন টেকনোলজী” আছে।
১০. যুক্তরাজ্য
১৯টি প্লান্টে দেশের ১৮ ভাগ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হয়। ১৯৫০ ও ১৯৬০ সালের দিকে স্থাপিত প্লান্টগুলোর অনেকগুলোই অবশ্য বন্ধ রয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য ২০০৮ সালে জানায় তারা আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আরও কিছু প্লান্ট স্থাপন করবে।
এখন অবশ্য এই সব প্লান্টের ঝুকির বেপারটা বুঝা যাবে না। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূযোগ মোকাবেলায় এবং প্লান্টের নিরাপত্তা ও সার্বক্ষনিক ভিন্ন কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বেপারটি কতটা নিশ্চিৎ করতে পারে তার উপরে অনেক কিছুই নির্ভর করে। তাছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে দূরত্ব ও অনেকগুলো বিষয়ই এক সূত্রে গাথা। জাপনের পারমানবিক পরিস্থিতিই বিশ্বকে তাদের বিশাল ঝুকির কথা মনে করিয়ে দেয়।
Post a Comment