অন্যতম জনাকীর্ণ এলাকা পাশে একুশের বইমেলা। সময় রাত আট টা। হাজার হাজার মানুষ মেলা থেকে ফিরছে। তখনই লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীকে উপর্যুপরি কোপায় দুই যুবক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা দুই মিনিটেই কাজ শেষ করে দুই দিকে পালিয়ে যায়। একজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এবং অন্যজন মিলন চত্বরের দিকে পালায়।
ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। কারণ তাদের ওপর হামলার স্থানটির আশপাশে বেশ কয়েকটি মোড়ে অবস্থান করছিল পুলিশ। হামলাস্থলের মাত্র ২৫ গজ দূরেই পুলিশ ব্যারিকেড ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ পথে সাতজন পুলিশ ডিউটিতে ছিল ওই সময়।
ঘটনাস্থল থেকে শাহবাগ থানার দূরত্ব ২৫০ গজ। পশ্চিমে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি আর পূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সবগুলো পথে পুলিশ চেকপোস্ট।
অভিজিৎ হত্যাকান্ডটি নিয়ে পুলিশের ভূমিকাসহ বেশ কিছু প্রশ্ন সকলের মনে উঁকি দিয়েছে। বিএনপি -জামায়াত যেখানে ঢাকা শহরের কোথাও একটি মিছিল পর্যন্ত বের করতে পারে না সেখানে টিএসসির মত
সুরক্ষিত জায়গায় এই ধরনের কাজ কোন বিরোধী শক্তির পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব।
আরো মজার কথা হলো, আওয়ামী লীগের জন্যে যখনই এই ধরনের জঙ্গী প্রচারনা দরকার পড়ে , তখনই কিছু জঙ্গী গোষ্ঠী বেরিয়ে আসে। ফেইসবুকে বা টুইটারের একটি একাউন্ট থেকে এই হত্যার দায় স্বীকার করে জঙ্গীরা বিবৃতি দেয়! সেই বিবৃতিকে ফলাও করে এমন ভঙ্গিতে প্রচার করে মোজাম্মেল বাবুদের টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা যে এর চেয়ে খাটি কথা ও প্রমাণ আর হতে পারে না।
অভিজিৎকে বাছাই করার পেছনে যে বিষয়গুলি কাজ করেছে সেগুলি হলো
১) তিনি হিন্দু, মুক্তমনা এই ব্লগার নাস্তিক হলেও তার হিন্দু নামটি বিজেপির হিন্দুত্বকে উস্কে দেওয়ার জন্যে খুবই কাজে দিবে। কারন বিজেপির সাম্প্রতিক মতিগতি নিয়ে সরকার খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। ভারতের নতুন স্বরাষ্ট্র সচিবের সফরের আগে আগে এই হত্যা কান্ডটি অন্য ধরনের ফলাফল এনে দিবে।
২) তিনি আমেরিকার নাগরিক। তার হত্যাকান্ডে জঙ্গীবাদের কার্ডটি জমবে ভালো। পশ্চিমা বিশ্বের একটি অপশক্তির করুণা পেতে এই হত্যাকান্ডটা সরকারকে সহায়তা করবে। জঙ্গীদের দমনে এই সরকারই পশ্চিমাদের দরকার বলে তীক্ষ্ণভাবে অনুভূত হবে।
৩) তিনি মুক্তমনা ব্লগার। এই ধরনের ব্লগার নিহত হলে তা সহজেই ইসলামপন্থীদের ঘাড়ে দোষটি দিয়ে দেয়া যায়। জনগণের চিন্তা এর বাইরে যাবে না।
এই ভয়ংকর ভাবনার নিষ্ঠুর শিকার হয়ে পড়েছে এই অভিজিৎ। সকল মুক্তমনাদের আরেকটু মুক্তভাবেই এই ভাবনাটি ভাবা উচিত। এক সময় তাজউদ্দীন আহমদ মুজিববাহিনীকে প্রচন্ড ভয় পেতেন। তিনি বলেছেন, আমাকে মেরে এই বাহিনী রাজাকারদের নামে চালিয়ে দিবে। সেই মুজিববাহিনীর সন্তান আফ্রিকান মাগুর সদৃশ্য এই গুন্ডা বাহিনী দেশের সকল মানুষকে আতংকে ফেলে দিয়েছে।
কয়েক জন অসুস্থ্য ও ক্রিমিনাল মানুষের জন্যে ষোল কোটি মানুষকে এই বিপদের দিকে টেনে নিবেন না। এমন একটি অবস্থায় আমরা কেউ নিরাপদ থাকবো না। আরো শৃঙ্খলিত হওয়ার আগেই যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ করুন, এদের মুখোশ উন্মোচন করুন। যারা সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন তারাও ভেবে দেখুন, কী ভয়ংকর দানবকে টিকে থাকতে আপনারা সহায়তা করছেন। এই দানবের ক্যালকুলেশনে পড়ে গেলে অভিজিতের মতো আপনার অথবা আপনার কোন প্রিয়জনের জীবন যে কোন মুহুর্তে চলে যেতে পারে।
Post a Comment