সোহেল রানা
বগুড়া সিটি ২৪
..…..…..…..…..…
প্রেট্রোল বোমার নেপথ্যে অধিকাংশ ঘটনাতেই সরকার এবং তাদের এজেন্টরা জড়িত কারণ হিসেবে তারা বলছে প্রথমত ৪ তারিখ থেকে চলমান বিরোধীজোটের আন্দোলনে দেখা গেছে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল খালি গাড়ি। রাজধানীসহ সর্বত্র যে কয়েকটা গাড়িতে আগুন দিয়েছে তাতে একজন মানুষ দগ্ধতো দূরের কথা আহতও হয়নি।
বাস থেকে নামিয়ে তারপর খালি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। কিন্তু বছরের শেষ হরতালে পেট্রোল বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরিত হয়ে আহত হয় যুবলীগের এক নেতা ও তার স্ত্রী বিরোধীজোটের হরতালের আগের দিন যুবলীগের নেতা কেন পেট্রোল বোমা বানাবেন? প্রশ্ন হলো সে বোমাগুলো কী কাজে ব্যবহৃত হবে?
দ্বিতীয়ত, শিবগঞ্জের গাড়ি পুড়লো আজিমপুরে কিভাবে? সে গাড়ি কিভাবে সেখানে গেল? আবার সে গাড়িটা পোড়ার সময় গাড়িটির চারপাশে পুলিশ ছিল বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশ কেন বাধা দিল না? উল্টো হামলাকারীদের নিরাপত্তা দিলো? তারমানে এই হামলাকারীরা সরকারের এজেন্ট?
তৃতীয়ত, পেট্রোল বোমা মারার সময় একজন হামলাকারীকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হাতেনাতে গ্রেফতার করতে পারেনি। যেখানে পুলিশ নাশকতার পরিকল্পনার অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করতে পারে সেখানে কেন পেট্রোল বোমা তৈরি বা মারার সময় কেউ গ্রেফতার হয় না?
চতুর্থত, পেট্রোল বোমায় যারা মারা যাচ্ছে বা দগ্ধ হচ্ছে তারা হয় নারী, না হয় শিশু না হয় সাধারণ মানুষ এদেরকে মেরেতো বিরোধীজোটের আন্দোলন লাভবান হচ্ছে না বরঞ্চ এসব নাশকতার চিত্র দেখিয়ে দেশে বিদেশে সরকার বিরোধীজোটের উপর মানুষ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ক্ষেপাচ্ছে প্রশ্ন হলো, বিরোধীজোট সরকারের জন্য পজিটিভ এই কাজটি কেন করবে?
পঞ্চমত, বিএনপির আমলে জঙ্গি হামলার দোষ যদি তৎকালীন সরকারকে দেয়া হয় তাহলে বর্তমানে চলমান সরকারের ভাষায় যে জঙ্গি তৎপরতা চলছে তার দায় কেন বিরোধীজোট নিবে, সরকার কেন নিবে না?
ষষ্ঠত, বিরোধীজোটের শতাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে কোন মানুষকে আহত করার বাপারে নিষেধ করা আছে যেহেতু সাধারণ মানুষকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হয় সে কারণে সাধারণ মানুষ যাতে মিনিমাম কোন হামলার শিকার না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
সপ্তমত, সরকার বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের মানুষ বা আলেমদের ক্ষেপিয়ে জঙ্গি প্রমাণ করতে এবারও একই প্রচেষ্টা চলছে সরকারের ভাষায় ওআইসি ও আশিয়ান দেশগুলো এসব নাশকতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বলেছে প্রশ্ন হলো আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে শক্ত অবস্থান দিতে কেন বিরোধীজোট নাশকতা করবে? এসব মানুষ মেরে লাভটা কার হচ্ছে? নিশ্চয়ই সরকারের হচ্ছে।
অষ্টমত, ২২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাসে আগুন দিয়েছে জয় বাংলা স্লোগান দেয়া মিছিলের সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমা মারার সময় বা বানানোর সময় যত সন্ত্রাসী আটক হয়েছে তার সবগুলোই যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কর্মী আর বিএনপি বা জামায়াত–শিবিরের গ্রেফতারকৃতরা সন্দেহভাজন হিসেবে মেস বা বাসা বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছে হাতেনাতে গ্রেফতার হয়নি কেউ কেন সরকারদলের সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমাসহ হাতেনাতে ধরা পরলো এবং তারা এখন কোথায়?
নবমত, আর পেট্রোল বোমার ঘটনাগুলো কেন শুধু নির্দিষ্ট স্থান ও বাসেই ঘটছে? আর ঘটনাগুলো ঘটার সাথে সাথে যেভাবে মিডিয়া ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা রোগী দেখতে যাচ্ছে এবং ফলাও করে প্রচার করছে তাতে প্রমাণ হয় না যে ঘটনাটিগুলো পরিকল্পিত ও সাজানো?
দশমত, বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরিত হয়ে আহত বাপ্পীকে সরকার কেন পরিকল্পিতভাবে হতা করলো। সত্য প্রকাশের ভয়ে? বাপ্পী বিএনপির কর্মী নয়। মূলত বাপ্পী আওয়ামীলীগের হাজী সেলিমের কর্মী বলেই জানে স্থানীয়রা। বাপ্পীকে একাধিকবার মতিঝিলে হাজী সেলিমের কোম্পানি মদিনা গ্রুপে গিয়ে টাকা আনতে দেখা গেছে বলে জানান বাপ্পীর এক সহকর্মী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে হাজী সেলিমের নির্বাচন করেছে বাপ্পী। নির্বাচনের সময়ও বোমা বানানোর জন্য তাকে ২ লাখ টাকা দেয় হাজী সেলিম।
এগারতম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ওমর শরীফ ফাঁস করে দিয়েছে কারা পেট্রোল বোমা বানাচ্ছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নাজমুলের সাথে বোমা তৈরির টাকা ভাগাভাগী নিয়ে ওমর শরিফের সাথে কোন্দল বাধায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে বলে জানিয়েছে সলীমুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ সেক্রেটারি। ওমর শরীফ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে পেট্রোল বোমা তৈরি এবং তা নিক্ষেপের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় নাজমুলকে। কিন্তু ওমর শরীফই মূলত ভোলা-৩ এর সাংসদ শাওনের সহযোগিতায় বোমা তৈরি করে। কিন্তু নাজমুল মূল দল থেকে আসা লক্ষ লক্ষ টাকার অধিকাংশ নিজেই খেয়ে ফেলে। আর সে টাকার অংশ ভাগাভাগী নিয়ে ওমর ও নাজমুলের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। এমনকি দুজন হাতাহাতি করে তৈরিকৃত বোমা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছুঁড়েও মারে। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে প্রচুর বোমা আবিষ্কৃত হয়েছে। এবং একটি হলে এ নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে। এছাড়াও, ঢাকা মহানগরীর মায়ার বাসা লিয়াকত, শাওন, পঙ্কজ ও দেবাশীষের গোপন বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকেই বোমা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় নাজমুলকে। ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগকে ইচ্ছেকৃত দূরে রাখা হয় যাতে ধরা খেলে সমস্যা কম হয় এরকমটিই জানিয়েছে যুবলীগের ঢাকা মহানগরীর মাকসূদ।
বারোতম, গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বনানীর শিবির সভাপতিকে রাতে মেস থেকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর নির্যাতন করে মিডিয়ার সামনে বলতে বলা হয় যে, বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা পেট্রোল বোমা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। এসব স্বীকার করলে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু মোস্তাফিজ ও তার কর্মীরা সে মিথ্যে বলতে রাজি না হওয়ায় তাকে সাজানো বোমার মজুদসহ মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে। কিন্তু তাদেরকে কোন কথা বলতে দেয়া হয়নি।
সরকারের এসব নাটক কী প্রমাণ করে না পেট্রোল বোমার মাধ্যমে সরকার বিরোধীজোটের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে?
এ বিষয়ে প্রথম আলোর একজন ক্রাইম রিপোর্টার জানায়, পেট্রোল বোমার দ্বারা হতাহতের অধিকাংশ ঘটনাগুলোর পেছনেই সরকারের হাত রয়েছে। তবে এ সকল ঘটনার সংবাদের ক্ষেত্রে পুলিশের বক্তব্যকেই প্রচারের নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোন ভিকটিমের বক্তব্য নেয়া যাচ্ছে না।
এটিএন নিউজের একজন নিউজ প্রডিউসার জানায়, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে প্রতিদিন যেন পেট্রোল বোমার বিষয়টি টকশোর বিষয় করা হয়। এবং টকশোর অতিথিদের মধ্যে বিএনপির কোন সিনিয়র বা ভালো টকারদের আনা না হয়। বিএনপির পক্ষে যাদের আনা হয় তারা মূলত বিএনপির নয় আওয়ামীলীগেরই বুদ্ধিজীবী কিন্তু বিএনপির সেজে কথা বলে। সরকারের কিছু সমালোচনা করলেও তারা মূলত বিএনপিকেই ঘায়েল করছে।
পেট্রোল বোমা বা গানপাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার অতীত রেকোর্ড আওয়ামীলীগেরই রয়েছে। এখনও ইউটিউবে পাওয়া যায় আওয়ামীলীগ নেতা শেখ সেলিমের সেই বক্তব্যটি যা ডিজিএফআইর কাছে দেয়া জবানবন্দীতে তিনি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন শাহবাগে শেখ হাসিনার নির্দেশেই ততকালীন যুবলীগের সভাপতি নানক ও মির্জা আজম বাসে গান পাউডার দিয়ে ১৫ জন সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে।
তবে সরকারের সকল নাটকই বুমেরা্ং হচ্ছে। সরকার বিরোধীজোটের আন্দোলনকে জনগণের ও বিশ্ববাসীর কাছে সন্ত্রাসী রূপ দিতে যে নাটক সাজিয়েছে সেটা ধীরে ধীরে সবাই বুঝে গেছে। জনগণ এখন বলছে, ঢাকা মেডিকেলে কোন সামান্য ইনজুর্ড রোগী গেলেও তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। মানুষকে মেরে সরকার বিরোধীজোটের আন্দোলনের বিরুদ্ধে যে মানবিক ব্লাকমেইল করছে সেটা জাতির কাছে খোলাসা হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের একাধিক বিশিষ্টজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক ভিসি বলেন, বিরোধীজোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দেশবাসী ও বিদেশিদের কাছ থেকে সরিয়ে নিতেই সরকার এতোসব নাটক করছে। সরকার ক্ষমতায় থাকতে এভাবে আর কত মানুষকে হত্যা করে নতুন নাটক তৈরি করবে এটাই এখন সবার প্রশ্ন!!
Post a Comment