ঈদের আগে মেহেদি
এআর/ আরএফ
ঈদের আগের রাতে নানান পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকেন সবাই। কারণ রাত পোহালেই তো অনেক অপেক্ষার ঈদ। ঈদকে একেবারে নিখুঁত আর আনন্দময় করতে আগের রাতে ব্যস্ততা প্রচুর। বিশেষ করে তরুণীদের ব্যস্ততা থাকে ঈদের আগের রাতে রূপচর্চা আর মেহেদি দেয়া নিয়ে। হাতে মেহেদি না দিলে যেন ঈদ পায় না ঈদের রূপ। তাই এবারের বাংলা ট্রিবিউন লাইফস্টাইলের আয়োজন চাঁদ রাতের মেহেদি দেয়া নিয়ে।
একটা সময় ছিল রমজানের ঈদেই শুধু মেয়েরা হাত মেহেদি দিয়ে রাঙাতো। রমজানের শেষভাগ শুরু হতেই বাড়ির মেয়েরা উঠানের কোণে থাকা মেহেদি গাছের পাশ ছাড়তো না। খুব যত্নে গাছের মেহেদি পাতা তুলে নিয়ে অপেক্ষা করতো। যেই ঈদের চাঁদ উঁকি মারতো আকাশে সেই শুরু হতো মেহেদি বাটার তোড়জোর। মেহেদি পাতার গন্ধ ছড়িয়ে যেত পুরো ঘরে। একদিকে চাঁদরাতে রান্না করা মায়েদের ধোঁয়া ওঠা সেমাই-পায়েসের ঘ্রাণ, অন্যদিকে মেহেদি পাতার গন্ধ- দুইয়ে মিলে এক নতুন সৌরভ ছড়িয়ে দিত ঘরজুড়ে। যাকে ঈদ সুগন্ধী বললেও ভুল হবে না।
এখন রমজানের ঈদের পাশাপাশি কোরবানী ঈদেও বেশ শুরু হয়েছে মেহেদি উৎসবের জোয়ার। আর সেসাথে যুক্ত হয়েছে মেহেদির নানান ফর্ম।
বাটা মেহেদির সেই আবেদন এখন কমেছে অনেক। সে জায়গা দখল করেছে টিউবে ভরা মেহেদি। তবে টিউব মেহেদিকে ঘিরেও তরুণীদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। ঈদ বলে কথা, যতো সহজে ধারণ করা যাবে উৎসবের রঙ, ততোই ভালো। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাচ্ছে, তাই বাটা মেহেদির স্থান আজ দখলে নিয়েছে টিউব মেহেদি। নানা ধরনের, নানা রঙের মেহেদি এখন মিলছে টিউবে। কোনোটা লাল, কোনোটা কালো,কোনোটা আবার গ্লিটার মেহেদি। আর মেহেদির মধ্যেও আছে নানান ধরন, যেমন- জেল, পেস্ট,ইন্সট্যান্ট আর বাজারে পাওয়া যায় পাউডার মেহেদিও।
মেহেদি কেনার বেলায় হতে হয় বেশ সচেতন। কারণ ইদানিং বাজারের টিউব মেহেদিগুলো অনেক বেশিমাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহার করে। তাই যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা অবশ্যই বাজার থেকে একটু যাচাই বাছাই করে কিনবেন, এমন পরামর্শ দিয়েছেন মেহেদি আর্টিস্ট সায়কা শাহরিন দিশা। তিনি জানান, সংবেদনশীল ত্বকের যারা, তাদের অতিরিক্ত কেমিক্যাল দেয়া মেহেদি ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষ করে বাজারে সহজলভ্য কালো মেহেদি আর ইন্সট্যান্ট মেহেদিতে প্রচুর কেমিক্যাল দেয়া থাকে। দিশা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে আমি বাজার থেকে ইন্সট্যান্ট মেহেদি কিনেছিলাম। তা দেয়ার কিছু সময় পর বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হয়। সেই মেহেদির কিছু অংশ আমার বেসিনে পড়েছিল, ওই দাগ এখনো যায়নি বেসিন থেকে। যে দাগ বেসিনের মতো জায়গায় এমন বাজেভাবে আটকে যায়, বুঝতে পারছেন সেই দাগ আমাদের ত্বকে কতোটা বাজে প্রভাব ফেলবে।‘
তাহলে মেহেদির জন্য নির্ভর করা যায় কিসের ওপর? এর জবাবে দিশা বলেন, ‘আমি বরাবরই মেহেদির ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করি। ভালো ব্র্যান্ডের, ভালো শো-রুম থেকে মেহেদি কিনে থাকি। কারণ সস্তা এবং সহজলভ্য মেহেদি কিনে ত্বকের সঙ্গে অন্যায় করা মোটেও উচিত হবে না।‘
ঈদকে সামনে রেখেই আরেক মেহেদি আর্টিস্ট রোমানা হোসেনও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেহেদি নিয়ে মেয়েদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। প্রচলিত আছে মেহেদির রঙ যতো গাঢ় হয়, প্রিয় মানুষটা তাকে ততোই বেশি ভালোবাসবে। তাই হাতের মেহেদিকে সবার চেয়ে গাঢ় করার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে প্রত্যেকেই। কিন্তু এমন করতে গিয়ে কেমিকালযুক্ত মেহেদি ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতি করে অনেকে। তাই পরামর্শ থাকবে মেহেদি কেনার বেলায় একটু সজাগ থাকার।‘ রোমানা জানান, ঈদের জন্য তিনি বিহারি মেহেদি ব্যবহার করে থাকেন। এ মেহেদী খুব একটা সহজলভ্য নয়। তাই আশপাশের যেকোন দোকান থেকে বিহারি মেহেদি না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, পুরান ঢাকার বিহারি মেহেদির ওপর ভরসা করতে পারে তরুণীরা। পুরান ঢাকার চক বাজারে একটু খোঁজ করলেই মিলবে তা। রোমানা আরো জানান,ঈদে অনেকেই এখন মেহেদি আর্টিস্টদের কাছ থেকে হাত রাঙাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ ঈদের আগে পার্লারে প্রচুর ভিড় হয়। শুধু মেহেদি নয়, আরো অনেক সার্ভিসের জন্যই নারীরা ভিড় করে পার্লারে। তাই শুধু মেহেদি দেয়ার জন্য পার্লারে যাওয়া চেয়ে অনেকেই ইদানিং মেহেদি আর্টিস্ট বুকিং দিয়ে রাখছে। যদি একজনের হাত রাঙাতে হয়, তাহলে মেহেদি আর্টিস্টের কাছে গিয়ে দেয়া যায়, কিংবা কয়েকজন একবারে মেহেদি দিতে চাইলে আর্টিস্টকেই বাড়ি নিয়ে আসা যায়। সেক্ষেত্রে নকশায় নৈপুণ্য ও নিখুঁতভাবও থাকে।
এবার আসা যাক এই ঈদের মেহেদি আয়োজনে। এরই মধ্যে শহরের নানান জায়গায় ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয়ে গেছে মেহেদি উৎসবের আয়োজন। মেহেদির নকশায় তরুণীদের পছন্দে আছে ফ্লোরাল, জিওম্যাট্রিক,ক্যালিগ্রাফিক, ট্র্যাডিশনাল মোটিফ। কেউ কেউ আবার ঘরে বানানো মেহেদি কোনও ব্যবহার করবেন মেলায়। তাই আর অপেক্ষা কিসের?আজই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিন হাত রাঙাবেন কোন উপায়ে- পার্লারে, মেলায় নাকি মেহেদি আর্টিস্টের কাছে গিয়ে? জলদি, ঈদ চলে এল বলে …
ছবি: আয়নাঘর, দিশা’স রোডব্লক, তুলেছেন- ফয়সাল মাসুম
Post a Comment