হরতালের আগেই বোমা হামলা, আজ থেকে টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল
স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আজ থেকে আবার সারাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল। আজ সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল চলবে বলে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। হরতাল শুরুর আগেই রবিবার রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকরা ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বিকেল ৩টায় যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ইউনিট অফিসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। মুহূর্তেই টিনসেট অফিসকক্ষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নেভান। এছাড়া শাহবাগ, রাজউক ভবনের সামনে এবং গুলিস্তানে আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে যাত্রীবাহী বাসে আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্টন ও বিজয়নগর এলাকায় ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ১০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। ককটেলের আঘাতে তিনজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে ফেলে।
বেলা ২টায় মহাখালী বাস স্টেশনে একটি মিনিবাসে, বিকেলে শাহজাপুরে একটি গাড়িতে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে, বিকেল ৩টায় তেজগাঁও বিএসটিআইয়ের সামনে একটি বাসে এবং বিকেলে তেজগাঁও বিদ্যুত অফিসের সামনে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা।
বেলা আড়াইটায় ২৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদল হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। এ সময় তারা ৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। এ ছাড়া তারা কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ করে। ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন মোতালেব নামে এক রিক্সাচালক। আহত মোতালেব (৪৫) সাংবাদিকদের জানান, আড়াইটার দিকে রিক্সা নিয়ে চৌধুরীপাড়ার পদ্মা সিনেমা হলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তার গলা, ডান কান ও মুখের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। আহত মোতালেব মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় থাকেন।
বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিলের রাজউক ভবনের সামনে সোনালী ব্যাংকের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ২টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে আরেকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে নয়াপল্টনে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ওই সময় তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পথচারীদের সহায়তায় প্রাইভেটকারটির আগুন নেভায়চালক। দুপুরে নয়াপল্টনে জোনাকী সিনেমা হলের বিপরীত দিকে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়া হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানায়, সকাল ৯টার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে বিআরটিসির তিন থেকে চারটি বাসে ভাংচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ এসে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে পিকেটাররা। পরে যাত্রীরা নেমে গেলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পারে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়। বাসটি আংশিক পুড়ে গেছে।
সকাল ৯টার দিকে খিলগাঁও তালতলা এলাকায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সেøাগান দেয়। মিছিলটি কিছুদূর যেতেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ সময় ফার্মগেট খামারবাড়িতেও একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। বাড্ডা লিংক রোডে সকাল সাড়ে ৮টায় জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে এ সময় বাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। একই সময় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে একটি যুবলীগ অফিসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এ ছাড়া মহাখালীতে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় হরতালকারীরা।
ফায়ার ব্রিগেড নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জানান, রবিবার সকাল ১০টা ৪০ এর দিকে মিতিঝিল টিএন্ডটি স্কুলের সামনে একটি বাসে এবং দুপুর ১২টার দিকে তেজগাঁও বিএসটিআই অফিসের সামনে আরেকটি আগুন দেয়া হয় বলে খবর পান তারা। আমাদের চারটি ইউনিট দুই স্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কারা, কিভাবে আগুন দিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তেজগাঁও এর বাসটি রানা গ্রুপের স্টাফ বাস ছিল। বেলা ২টার দিকে মহাখালীর তিতুমীর কলেজের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় কলেজের বিপরীতে পর্যটন হোটেলের সামনে থাকা একটি মিনিবাসে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়রাই তা নিভিয়ে ফেলেন।
বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হোসেন বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বেলা ২টা ৪০ এ গুলিস্তানে ইলিশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। কাঁটাবনে বিকেল সাড়ে ৩টায় আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ আলী জানান, অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সরকারী স্টাফদের যাতায়াতের কাজে নিয়োজিত একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকরা। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আলমগীর জানান, রবিবার দুপুরে বিএনপির কার্যালয়ের পাশে হোটেল অরচার্ড প্লাজার সামনে একটি প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় শাহবাগ থানার আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে পলাশ পরিবহনের একটি বাস পার্কিং করা ছিল। এ সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে। বাসটি সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে ১৪ দলের সমাবেশে নেতাকর্মীদের বহন করে নিয়ে আসা হয়েছিল। সমাবেশ শেষে তাদের পুনরায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। পলাশ পরিবহনের বাসের মালিকের ভাই আবু হানিফ জানান, বিকেল ৪টার দিকে সাভারের যুবলীগ ও আওয়ামীল লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা হয়। এর পর আমরা বাস থেকে শাহবাগ মোড় দিয়ে যাওয়ার পরই কে বা কারা বাসে অগ্নিসংযোগ করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নির্বাপণ করেন। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় মহাখালী আমতলীতে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। সন্ধ্যা ৭টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে আগুন দেয় পিকেটারা।
রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার না করলে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায়মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
রবিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হরতালে বাধা সৃষ্টি করতে সরকার সারাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার নির্যাতন চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাসির নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
উল্লেখ্য, ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, ২৬ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে সংলাপের উদ্যোগ না নিলে ২৭ অক্টোবর থেকে টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালন করা হবে। খালেদা জিয়ার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ফোন করে ৩৭ মিনিট কথা বলেন। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহার করের ২৮ অক্টোবর গণভবনে নৈশভোজে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন। এর পর ২৭ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আজ থেকে আবার সারাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল। আজ সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল চলবে বলে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। হরতাল শুরুর আগেই রবিবার রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকরা ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বিকেল ৩টায় যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ইউনিট অফিসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। মুহূর্তেই টিনসেট অফিসকক্ষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নেভান। এছাড়া শাহবাগ, রাজউক ভবনের সামনে এবং গুলিস্তানে আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে যাত্রীবাহী বাসে আগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্টন ও বিজয়নগর এলাকায় ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ১০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। ককটেলের আঘাতে তিনজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিভিয়ে ফেলে।
বেলা ২টায় মহাখালী বাস স্টেশনে একটি মিনিবাসে, বিকেলে শাহজাপুরে একটি গাড়িতে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে, বিকেল ৩টায় তেজগাঁও বিএসটিআইয়ের সামনে একটি বাসে এবং বিকেলে তেজগাঁও বিদ্যুত অফিসের সামনে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা।
বেলা আড়াইটায় ২৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদল হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। এ সময় তারা ৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। এ ছাড়া তারা কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ করে। ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন মোতালেব নামে এক রিক্সাচালক। আহত মোতালেব (৪৫) সাংবাদিকদের জানান, আড়াইটার দিকে রিক্সা নিয়ে চৌধুরীপাড়ার পদ্মা সিনেমা হলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তার গলা, ডান কান ও মুখের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। আহত মোতালেব মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় থাকেন।
বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিলের রাজউক ভবনের সামনে সোনালী ব্যাংকের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ২টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে আরেকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে নয়াপল্টনে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। ওই সময় তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পথচারীদের সহায়তায় প্রাইভেটকারটির আগুন নেভায়চালক। দুপুরে নয়াপল্টনে জোনাকী সিনেমা হলের বিপরীত দিকে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়া হয়।
যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানায়, সকাল ৯টার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে বিআরটিসির তিন থেকে চারটি বাসে ভাংচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ এসে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে পিকেটাররা। পরে যাত্রীরা নেমে গেলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পারে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়। বাসটি আংশিক পুড়ে গেছে।
সকাল ৯টার দিকে খিলগাঁও তালতলা এলাকায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সেøাগান দেয়। মিছিলটি কিছুদূর যেতেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ সময় ফার্মগেট খামারবাড়িতেও একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। বাড্ডা লিংক রোডে সকাল সাড়ে ৮টায় জামায়াত-শিবির একটি মিছিল বের করে এ সময় বাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। একই সময় উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে একটি যুবলীগ অফিসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এ ছাড়া মহাখালীতে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি গাড়িতে আগুন দেয় হরতালকারীরা।
ফায়ার ব্রিগেড নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জানান, রবিবার সকাল ১০টা ৪০ এর দিকে মিতিঝিল টিএন্ডটি স্কুলের সামনে একটি বাসে এবং দুপুর ১২টার দিকে তেজগাঁও বিএসটিআই অফিসের সামনে আরেকটি আগুন দেয়া হয় বলে খবর পান তারা। আমাদের চারটি ইউনিট দুই স্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কারা, কিভাবে আগুন দিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তেজগাঁও এর বাসটি রানা গ্রুপের স্টাফ বাস ছিল। বেলা ২টার দিকে মহাখালীর তিতুমীর কলেজের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় কলেজের বিপরীতে পর্যটন হোটেলের সামনে থাকা একটি মিনিবাসে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়রাই তা নিভিয়ে ফেলেন।
বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হোসেন বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বেলা ২টা ৪০ এ গুলিস্তানে ইলিশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। কাঁটাবনে বিকেল সাড়ে ৩টায় আরেকটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ আলী জানান, অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সরকারী স্টাফদের যাতায়াতের কাজে নিয়োজিত একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকরা। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আলমগীর জানান, রবিবার দুপুরে বিএনপির কার্যালয়ের পাশে হোটেল অরচার্ড প্লাজার সামনে একটি প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিকেল সাড়ে ৩টায় শাহবাগ থানার আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে পলাশ পরিবহনের একটি বাস পার্কিং করা ছিল। এ সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে। বাসটি সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে ১৪ দলের সমাবেশে নেতাকর্মীদের বহন করে নিয়ে আসা হয়েছিল। সমাবেশ শেষে তাদের পুনরায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। পলাশ পরিবহনের বাসের মালিকের ভাই আবু হানিফ জানান, বিকেল ৪টার দিকে সাভারের যুবলীগ ও আওয়ামীল লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা হয়। এর পর আমরা বাস থেকে শাহবাগ মোড় দিয়ে যাওয়ার পরই কে বা কারা বাসে অগ্নিসংযোগ করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নির্বাপণ করেন। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় মহাখালী আমতলীতে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। সন্ধ্যা ৭টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে আগুন দেয় পিকেটারা।
রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার না করলে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায়মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
রবিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হরতালে বাধা সৃষ্টি করতে সরকার সারাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার নির্যাতন চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাসির নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
উল্লেখ্য, ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, ২৬ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের তরফ থেকে সংলাপের উদ্যোগ না নিলে ২৭ অক্টোবর থেকে টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালন করা হবে। খালেদা জিয়ার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ফোন করে ৩৭ মিনিট কথা বলেন। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে হরতাল প্রত্যাহার করের ২৮ অক্টোবর গণভবনে নৈশভোজে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু খালেদা জিয়া হরতাল প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন। এর পর ২৭ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
Post a Comment